খুলনা | সোমবার | ৩১ মার্চ ২০২৫ | ১৭ চৈত্র ১৪৩১

আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত : খুলনায় চলছে প্রতিশোধের সিরিজ হত্যাকান্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:২৪ এ.এম | ১৭ মার্চ ২০২৫


খুলনার আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত। মাঝে কিছু দিন বিরতি থাকলেও আবার সক্রিয় চরমপন্থি সন্ত্রাসীরা। মৃত্যু আতঙ্কে আত্মগোপনে থাকা খুলনার শীর্ষ চরমপন্থি নেতা শেখ শাহীনুল হক শাহীনকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। তিনি বড় শাহীন নামে এলাকায় পরিচিত। গত শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে খুলনা সদর থানার বাগমারা ব্রিজের কাছে এ ঘটনা ঘটে।  নিহত শাহীন নগরীর দৌলতপুর থানার কার্তিককুল এলাকার শেখ আব্দুর রশিদের ছেলে। শাহীনের বিরুদ্ধে নগরীর দৌলতপুরের আলোচিত শহীদ ওরফে হুজি শহীদ হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
এ ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব নাগরিক নেতা এড. বাবুল হাওলাদার। তিনি বলেন, বারবার পুলিশ কমিশনারসহ কেএমপি’র শীর্ষ কর্তারা আশ্বাস দিলেও বাস্তবে মাঠ পটর্য়ায়ে তার প্রতিফলন আমরা দেখছিন। এখন রাস্তায় হাটতে গেলে ভয় লাগে। তিনি বলেন, পুলিশ গোয়েন্দা বিভাগ অকার্যকর, যে কারণে বারবার এধরনের ঘটনা ঘটছে। তাছাড়া মাঠ পর্যায়ের আন্তরিকতার ঘাটতি আমরা গত বছর ৫ আগস্টের পর থেকেই দেখছি। শীর্ষ কর্তারা এ বিষয়ে অহিত হলেও কোনো সফলতা দেখাতে পারছে না।
নিহত বড় শাহীন খুলনার দৌলতপুরের বিবাদমান দু’টি সন্ত্রাসী গ্র“পের মধ্যে আলোচিত টাইগার খোকনের বিশ্বস্ত সহচর ছিল। ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে দিঘলিয়া উপজেলায় একটি বাড়িতে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী গ্র“পের হাতে ব্রাশ ফায়ারে টাইগার খোকনসহ তার তিন সহযোগী নিহত হয়। এরপর থেকে টাইগার খোকনের ছোট ভাই জামিরকে হত্যা করে প্রতিপক্ষ গ্র“প। একই গ্র“পের হাতে নিহত হয় আড়ংঘটা এলাকার ৫জন। যারা সকলেই টাইগার খোকনের অনুসারী ছিলেন। এরপর থেকে খোকন গ্র“পের অনুসারীরা এলাকা ছাড়া হয়ে যায়। তবে ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে দৌলতপুরের চরমপন্থি গ্র“পের অন্যতম নেতা হজি শহিদ নিহত হওয়ার পর ওই এলাকার বিবাদমান সকল সন্ত্রাসী গ্র“প ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ প্রভাবশালীদের আসামি করা হয়। তখন থেকে নিহত বড় শাহিন আত্মগোপনে চলে যায়।
খুলনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সানোয়ার হোসেন মাসুম বলেন, শনিবার রাতে সন্ত্রাসীরা গুলি করে শাহীনকে হত্যা করেছে। তার মাথায় গুলির দুটি চিহ্ন রয়েছে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। তবে কারা এবং কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড তা এখনও পুলিশ জানাতে পারেনি।
তিনি আরও জানান, দৌলতপুর থেকে শাহীনকে ডেকে বাগমারা এলাকায় নিয়ে তার পরিচিত কেউ তাকে হত্যা করেছে বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে।
এদিকে শনিবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে নগরীর আমতলা শেরে এ বাংলা রোড হাজীবাড়ির সামনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে এক ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে জখম করা হয়। গুরুতর অবস্থায় তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হজি শহীদ হত্যাকাণ্ড : আধিপত্য বিস্তার ও চরমপন্থি কানেকশনের কারণে ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে খুন হন খুলনার তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী শহীদুল ইসলাম ওরফে হজি শহীদ (৪০)। যারা প্রকাশ্য দিবালোকে ফিল্মি স্টাইলে হজি শহীদকে গুলি করে হত্যা করেছে তারা চরমপন্থি দলের সক্রিয় সদস্য। খুলনা-যশোর মহাসড়কে দিনদুপুরে হজি শহিদের গাড়িতে গুলি নিক্ষেপ করতে থাকে সন্ত্রাসীরা। তার চালক ওই অবস্থায় প্রায় এক কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি। রাস্তার দু’পাশের সাধারণ লোকজন তখন মনে করছিল হয়তো কোনো শুটিং চলছে। সেটা যে হত্যা মিশন তা কিছুক্ষণ পরেই মানুষ জানতে পারে।
পুলিশ ওই সময় জানায়, আধিপত্য বিস্তার ও নিষিদ্ধ ঘোষিত দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্ব›েদ্বর কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। এ ছাড়াও পুলিশ ধারণা করছে, এক সময়ের শীর্ষ সন্ত্রাসী নগরীর দৌলতপুরের রফিকুল ইসলাম হিটলার হত্যার প্রতিশোধ নিতেও এ হত্যাকাণ্ডের পিছনে কাজ করেছে।
হিটলার ছিল পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (এমএল) জনযুদ্ধের একজন প্রথম সারির নেতা ও শীর্ষ ক্যাডার। হিটলার হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ছিল এই হজি শহীদ। নিহত শহীদও ছিল পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (জনযুদ্ধ) একজন সক্রিয় সদস্য।
হজি শহীদের বিরুদ্ধে যশোরের নির্ভীক সাংবাদিক জনকন্ঠের ব্যুরো প্রধান শামসুর রহমান কেবল ও খুলনা মহানগরীর দৌলতপুরের রফিকুল ইসলাম হিটলার হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে ৯টি মামলা ছিল।
সাবেক কাউন্সিলর টিপু হত্যাকাণ্ড : চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ৪ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিল গোলাম রব্বানী টিপু প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীদের গুলিতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে নিহত হন। টিপু হজি শহিদ হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। পরে পুলিশ ৩জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় এবং হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মেচন হয়। একজন নারীকে হানি ট্রিপ হিসেবে ব্যবহার করে সাবেক কাউন্সিলর টিপুকে হত্যা করে হজি শহিদের ভাইপো শেখ শাহরিয়ার ইসলাম পাপ্পু। চাচার হত্যার বদলা নিতে সে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটায়। এ ঘটনায় পাপ্পুর সঙ্গে ঋতু নামে এক নারী ও গোলাম রসুল গ্রেফতার হয়। উদ্ধার হয় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র ও আলামত।
এদিকে শনিবার রাতে নিহত বড় শাহীনও হজি শহিদ হত্যা মামলার আসামি। তবে সে আত্মগোপানে ছিল শুধু হজি শহিদ হত্যা মামলা আসামি হিসেবে নয়, তার প্রতিপক্ষ গ্র“পের ভয়ে। 
এদিকে খুলনায় থেমে নেই প্রতিশোধের সিরিজ হত্যাকাণ্ড। চরমপন্থি রফিকুল ইসলাম হিটলার, হজি শহিদ, সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী টিপু ও সর্বশেষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হলো বড় শাহিন ।
খুলনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেন মাসুম রোববার সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদককে বলেন, এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। আর বাদী আসলে মামলা হবে এমনটি বললেন, তিনি।

্রিন্ট

আরও সংবদ